Saturday, December 17, 2016

পরিবেশবান্ধব ‘বন্ধু’ চুলা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আদমপুর গ্রামের নিলুফা বেগম দীর্ঘ দিন ধরে ভুগছিলেন হাঁপানিতে। ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে তার কাছে হঠাৎ করেই বন্ধু হয়ে এলো ‘বন্ধু’ চুলা। শুরু হয় রান্নাঘরে নিলুফার ধোঁয়া ও দূষণমুক্ত জীবন। চুলা ব্যবহারের কয়েক মাসের মধ্যে তার হাঁপানি প্রশমন হতে থাকে। এখন পুরোপুরি সুস্থ তিনি। 
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ হাঁপানি রোগে ভুুগছেন। এর মধ্যে
এক-তৃতীয়াংশ মানুষ রান্নাঘরের ধোঁয়াজনিত কারণে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর দেশে ধোঁয়াজনিত বিভিন্ন রোগে ৫০ হাজার নারী ও শিশু মৃত্যুবরণ করছে। আশঙ্কাজনকভাবে এর মাত্রা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। 

বন্ধু চুলার উদ্যোক্তরা জানান, ধোঁয়াজনিত বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে ২০০৬ সাল থেকে চালু হয়েছে পরিবেশবান্ধব বন্ধু চুলা। বর্তমানে সারা দেশে ১৫ লাখ পরিবার এ চুলা ব্যবহার করছে। জ্বালানি সাশ্রয়ী এ চুলার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। 
বন্ধু চুলার বাজার উন্নয়ন উদ্যোগের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার এম খালেকুজ্জামান বলেন, দেশে বন্ধু চুলা প্রোগ্রাম ২০০৬ সাল থেকে শুরু হয়। বর্তমানে যৌথভাবে এর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জেআইজেড, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ অধিদফতর। প্রথম দিকে মাটির তৈরি বন্ধু চুলা ব্যবহার করা হতো। পরে ২০১১ সাল থেকে দেশে পরীামূলকভাবে মাটির চুলার পরিবর্তে কংক্রিটের তৈরী বন্ধু চুলা চালু করা হয়। গ্রামের স্যানিটারি কাজ করে এসব ব্যবসায়ীকে সাথে নিয়ে এর কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
এম খালেকুজ্জামান জানান, ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে এ চুলা ব্যবহারের ল্য নিয়ে এগোচ্ছেন তারা। দেশব্যাপী প্রায় ছয় হাজার উদ্যোক্তা বর্তমানে বন্ধু চুলা তৈরি করছেন। বিভিন্ন জেলায় এরই মধ্যে ৩৬টি গ্রামকে শতভাগ বন্ধু চুলা ব্যবহারের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন, বন্ধু চুলা ব্যবহার করলে জ্বালানি খরচ হয় অর্ধেক। একজন কারিগর গড়ে প্রতিদিন ৫০টি বন্ধু চুলা তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি বন্ধু চুলা তৈরি করতে ৮০০ টাকা খরচ হয়। 
বগুড়া ও গাইবান্ধার বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিন ঘুরে বন্ধু চুলার ব্যবহারে বিপ্লব লক্ষ করা গেছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কাঁটাখালী ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের ১৮৮টি পরিবার পরিবেশবান্ধব বন্ধু চুলা ব্যবহার করছে ২০১৩ সালের ৯ নভেম্বর থেকে। গৃহিণী এমিলি, সাবিনা ইয়াসমীন, রেনু বেগম জানালেন, বন্ধু চুলার উপকারিতার কথা। তারা বলেন, কালি, ধোঁয়ামুক্ত রান্নাঘর তাদের মুক্তি দিয়েছে নিত্যদিনের যন্ত্রণা থেকে। রান্না হচ্ছে দ্রুত, সাশ্রয় হচ্ছে জ্বালানি। 
উদ্যোক্তারা জানান, বন্ধু চুলা একটি উন্নত চুলা। এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনে এবং সহজলভ্য উপকরণে তৈরী। ছাঁকনি, চিমনি এবং টুপি এই চুলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ছাঁকনির ওপর জ্বালানি পোড়ানো হয়। ধোঁয়া চিমনি দিয়ে ঘরের বাইরে চলে যায়। বন্ধু চুলার আগুনের তাপ বেশি কাজে লাগে। ফলে কম জ্বালানিতে তাড়াতাড়ি রান্না হয়। বন্ধু চুলা একমুখী কিংবা দুইমুখী হয়ে থাকে। প্রয়োজনে বন্ধু চুলা সম্পূর্ণ বা অর্ধেক মাটির ওপরে বানানো যেতে পারে। বর্তমানে বন্ধু চুলা কংক্রিট এবং পোড়ামাটির সংস্করণেও পাওয়া যাচ্ছে। 
বন্ধু চুলার বৈশিষ্ট্যÑ প্রচলিত চুলার চেয়ে অর্ধেক জ্বালানি ব্যবহার হয়। রান্নাঘর ধোঁয়া ও দূষণমুক্ত থাকে। চোখ জ্বালা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, মাথাব্যথা ও ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি কমে। অগ্নিজনিত দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমে যায়। গ্রিন হাউস ইফেক্ট কমাতে সাহায্য করে। একটি বন্ধু চুলা ব্যবহারে বছরে ১ দশমিক ৭ টন কার্বন-ডাই অক্সাইড কম নির্গমন হয়।to know more

1 comment: